রাজিব শর্মা, চট্টগ্রাম : সোমবার সন্ধ্যা ৫টা ০৭ মিনিট থেকে শুরু হয় চলতি বছরের চতুর্দশী তিথি। নিকটজনের মঙ্গল কামনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ তিথিতে শিবস্নানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালন করেন। শিব চর্তুদশী তিথিতে দেশ বিদেশ থেকে আসা হাজারো পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে।
প্রতিবছরের মত এবারও এ উপলক্ষে চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় মেলা বসেছে। গতকাল রবিবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা তিনদিন চলবে। রবিবার থেকেই দেশি-বিদেশি ভক্ত ও পর্যটকরা সীতাকুন্ডে জড়ো হতে শুরু করেছেন।
আজ সোমবার রাতে শিব পূজ জন্য বেশিরভাগ পুণ্যার্থী বিকাল থেকে পাহাড়ে ওঠা শুরু করে। ব্যাসকুন্ডে স্নান করে পাহাড়ে ওঠা শুরু করে। প্রথমে ২০০ ফুট উঠে বীরুপক্ষ মন্দির দর্শন করেন।
সব শেষে ১২শ’ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চন্দ্রনাথের মন্দিরে যান। রাতে সেখানেই শিবস্নান ও পুষ্পাঞ্জলি দেন ভক্তরা।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, সোমবার মূল আয়োজন হলেও রবিবার থেকেই অনেকে পাহাড়ে উঠছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
মেলা চলাকালে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের সুবিধার জন্য নিয়মিত পাঁচটি ট্রেনের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি ট্রেন সীতাকু্ন্ডে যাত্রাবিরতি করে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ও চট্টলা এক্সপ্রেস, সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস, চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামগামী মেঘনা এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ঢাকা মেইল সীতাকুন্ডে থামে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় চার শতাধিক পুলিশের পাশাপাশি আরও ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপত্তার পাশাপাশি চাঁদাবাজি রোধেও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাস্তার পাশাপাশি পাহাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা মোতায়েন আছে। মেলায় আসা দোকান এবং গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ যেন অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মহা শিবরাত্রি সম্পর্কে কিছু তথ্য:
আজ সোমবার(০৪/০৩/২০১৯) দেশজুড়ে মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে মহা শিবরাত্রি। শিবরাত্রি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে সকাল থেকেই নেমেছিল মানুষের ঢল। ভক্তিভরে দেবাদিদেবের পুজোয় মেতেছেন সকলে। শিবরাত্রি নিয়ে মানুষের উৎসাহের কোনও অন্ত নেই। মহাদেবের পুজো করতে চান না এমন মানুষের দেখা মেলাও বেশ কঠিন। কিন্তু শিব আরাধনা সম্পর্কে বহু তথ্যই সাধারণ মানুষের অজানা। মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে এমন কিছু তথ্যই রইল এই প্রতিবেদনে।
বছরের প্রতি মাসেই আসে শিবরাত্রি। প্রতি কৃষ্ণ পক্ষের ১৪তম রাত্রি হল শিবরাত্রি। কিন্তু মাঘ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ১৪তম রাতে মহাশিবরাত্রি পালন করা হয় কারণ এই রাতটা মহাদেবের সবথেকে পছন্দের।
হিন্দু মহাপুরাণ তথা শিবমহাপুরাণ অনুসারে এইরাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন। আবার এইরাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। এর নিগুঢ় অর্থ হল শিব ও শক্তি তথা পুরুষ ও আদিশক্তি বা পরাপ্রকৃতির মিলন।
পুরাণ মতে এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তার প্রতীক লিঙ্গ তথা শিবলিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপনাশ ও মুক্তির পথ দিয়েছিলেন।
শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক ব্যাধ বাস করতেন। তিনি প্রচুর জীবহত্যা করতেন। একদিন শিকারে তাঁর খুব দেরি হয়ে যায়। হিংস্র পশুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি একটি গাছের উপর আশ্রয় নেন। কোনও শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলতে থাকেন তিনি। সেই গাছটি ছিল বেলগাছ। আর সেই বেলগাছের নীচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিলেন উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তাঁর শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ি ফিরে এলে নিজের খাবার তিনি এক অতিথিকে দিয়ে দেন। এতে তাঁর ব্রতপালন সফল হয়।
এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের সুফল হিসাবে শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত যাঁরা পালন করেন, তাঁদের উপর যমের কোনও অধিকার থাকেনা। তাঁর মুক্তিলাভ ঘটে এইভাবে। মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে। পুরাণ মতে শিবরাত্রির রাত হল সবচেয়ে অন্ধকার রাত।