
আরিফ চৌধুরী শুভ :: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরো সহনশীল হওয়া উচিত। কভিড-১৯ এর দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য দ্রুত হল বন্ধের সিদ্ধান্তটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিকতর যোক্তিক ছিল, তেমনি হল খোলার ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষকে আরো স্পষ্ট হওয়া উচিত এই মুহুর্তে। কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপন ই যেন শিক্ষার্থীদের বিদ্রোহী করে তুলছে। আরো বিলম্বে ঝরতে পারে প্রাণ!
একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ রাখবেন আরেক দিকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন সেটি একেবারে অনভিপ্রেত এবং চরম অপ্রাতিষ্ঠানিকতারই পরিচয়। আমরা জানি প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন আছে। সবচেয়ে বড় আইনটি হলো প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ই স্বয়ত্ব-শাসিত। স্বাধীন ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার এখতিয়ার তাদের আছে; কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের তাবেদারিতে এত বেশি ব্যস্ত যে, মাঝে মাঝে তারা নিজেদের অস্তিত্বই ভুলে যায়। এ সুযোগে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস হয়ে উঠে রাজনীতির ময়দান। সুতরাং সরকারের হুকুম ছাড়া তারা একচুলও নড়াচড়া করতে পারে না। করলে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলোর তোপের মুখে পড়তে পারে।তাই হল খোলা আর না খোলা নিয়ে শুরু হল সাপলুডু খেলা। এ খেলার আবসান কোথায় কে জানে?
এরই মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে স্থানীয়দের সাথে। আহত হয়েছে বহু শিক্ষার্থী। অপরাধী যেই হোক না কেন, ঘটনার মূল ইস্যু হলের সমস্যা নিয়ে। সুতরাং বড় ধরণের সংঘর্ষ এড়াতে কর্তৃপক্ষকে এখনই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
স্থানীয় সংঘর্ষের জের ধরে শিক্ষার্থীরা এখন হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করছে। এসব ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যতটা না নষ্ট করছে, তারচেয়ে বেশি হুমকির বার্তা দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষায় আগতদের মনে। এমনিতেই অটোপাশের ফলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছে, তার উপর বড়ভাইদের এমন তালাভাঙ্গার মহড়া তাদের আতঙ্কিত করবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন জাগে মনে।
হলের তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশকে অনেকে আবার বীরের তকমা দিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু এই তালাটি হলের না হয়ে যদি আপনার বাসা বাড়ি বা অফিসের হতো, তাহলে সন্ত্রাস আর ডাকাত বলে চিৎকার করতেন। পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিতেন। আমার বিশ্বাস, কোন বাবা-মা তার সন্তানকে এভাবে তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশকে প্রশংসার চোখে দেখবেন না। আমি আমার ভাই-বোনকে এভাবে দেখতে চাই না। আমিতো জানি উচ্চ শিক্ষা বিনয়ী করে মানুষকে, উগ্র নয়। খুব কঠিন করে বলে ফেললাম আমার সহপাঠি ভাইবোনদেরকে নিয়ে। হলে ফিরে যাবার আন্দোলনটা ভিন্নভাবেও করা যেত একবার ভেবে দেখুন।
আমি যদি ধরে নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্যায় ভাবে হল বন্ধ করে রেখেছে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ তাদের নাড়া দিচ্ছে না, তাহলে কি করণীয়?
যারা আইনের শিক্ষার্থী আছেন তারা নিশ্চয় আমার সাথে সহমত পোষণ করবেন। দিনের পর দিন হল বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বা সম্মিলিত গ্রুপ উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করতে পারতেন। আদালত যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে রায় দিতেন। তাতে হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতো আপনাদের। আদালত যদি হল খুলে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিত, তখন আর কিছু করার থাকতো না। আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে আপনারা তখন যদি তালা ভেঙ্গে হলে ঢুকে পড়তেন, তাহলে আপনারা বাহাবা পাওয়ার মতো কাজ করতেন। তখন আদালতই আপনাদের বাহাবা দিয়ে জবাব দিহীতার কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু আজ আপনারা যে বিবেকের কাঠগড়ায় আসামী হয়ে গেলেন যোলকোটি মানুষের।
আপনাদের কষ্টগুলো আমারো কষ্ট, কিন্তু তালাভেঙে হলে ঢুকার মতো অন্যায় সাহস ও চেষ্টা কোনটাই আমার নেই। আমার উচ্চ শিক্ষা বা আমার পরিবার আমাকে কোনটাতেই উৎসাহিত করতো না। তাই আমি আপনাদের এ আন্দোলনের সহযাত্রী হতে পারলাম না।
আপনাদের দু:খের অবসান হোক খুব দ্রুত সেটিই প্রত্যাশা। শিক্ষা হোক আনন্দের।
লেখক: শিক্ষার্থী (মাস্টার্স), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাতা- জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন(জাপাআ)