মনের ভাবনার স্মৃতি

হয়তো এটা গল্প হতে পারতো, কিন্তু মনে হল এইভাবেই হয়তো পড়তে ভালো লাগবে —-
বড় হলাম
—————জাকের আলী
ছোট্ট মেয়ের অবাক ভরা প্রশ্ন –
আছছা বাবা,”ঐ আকাশের তারাগুলো সব
আমারি সঙ্গে হেঁটে হেঁটে কেন চলে?”
জড়িয়ে ধরে বাবা হেসে কয়-
“কেন আবার, আমার এই চাঁদের সাথে থাকবে বলে!”
মেয়ের মনে আবার প্রশ্ন জাগে –
“এবারে বলো, আকাশ থেকে বৃষ্টি কেন ঝরে?”
বাবা উত্তর দেয় মেয়ের গালটি ধরে –
“আমার সোনা খুব গরমে যখন হাঁপিয়ে ওঠে,
সূয্যি মামা তলব পাঠায় বরুণ দেবতাকে!
আকাশে সে বিছিয়ে দেয় মেঘের সামিয়ানা;
তাই তো টাপুর-টুপুর ঝরতে থাকে মিষ্টি বৃষ্টি কণা।”
এমন আরো কতো যে প্রশ্ন উঁকি দেয় মেয়ের মনে-
বাবা তো তার সবই জানে, তাই বুঝিয়ে দেয় ক্ষণে ক্ষণে।
বাবার সাথেই রোজের খেলা, রোজের ঝগড়া, ঘোরাফেরা,
আদর ভরা হাতদুটিতে গলা জড়িয়ে ভাবে –
“এমন বাবা আর কারো হয়?
এমন বন্ধু আর কি কারো হয়?”
ছোট্ট মেয়ে আর ছোট্টটি নেই এখন-
চলেছে সে আজ গড়তে নিজের ঘর।
বাবার হাতটি ছেড়ে ধরেছে স্বামীর হাত!
নতুন তার স্বপ্ন, নতুন সংসার, নতুন সম্পর্কের বেড়াজাল।
কিন্তু এখনও সবকিছুতেই কেন যে তার বাবাকেই মনে পরে!
নতুন কত প্রশ্ন এখনো অবচেতন মনে জাগে-
কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা সংশয় চুপ করিয়ে রাখে।
ছুটে যায় ফোনটি হাতে নিয়ে -“হ্যালো বাবা!”
এক নিশ্চিন্ত আশ্বাসের কন্ঠ ওপার হতে;
তার সব সমস্যার যেন এক স্থায়ী সমাধান!
দিন যায়, মাস ফুরায়, বছর হয় পার-
সোনা মেয়ের কোলজুড়ে আজ ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান!
নাম তার “পারিজাত “-
সমুদ্রমন্থনের সময়ে যে স্বর্গীয় গাছ উঠে এসেছিল;
নামটি দিয়েছিল তো সেই বাবাই!
ব্যাখ্যা ছিল –
পার্থিব জীবনে পরম সুখময় অনুভূতি যে দেয়-
সেই তো “পারিজাত “!
এমনিভাবেই অনেকগুলো বছর হলো পার-
বয়স বেড়েছে মেয়ের, বাবার ও চুলে ধরেছে পাক।
ইদানীং বাবার শরীরটা ভাল যাছছে না আর,
ডাক্তার-বদ্যি, ওষুধ-পথ্যে কিছুতেই হছছে না আর খুব একটা কাজ।
তবুও মেয়ের বেশ গল্প চলে বাবার সাথে –
তফাৎ শুধু একটাই
আগে ছিল প্রাণোছছল এক বাবা বক্তা, আর তার ছটফটে মেয়ে শ্রোতা,
আর এখন, অশীতিপর বৃদ্ধ প্রবীণ শ্রোতা আর তার আধুনিকা, অভিজ্ঞা মেয়ে বক্তা!
দুজনেরই এখন অনেক অবসর-
দুই প্রজন্মের দুটি মানুষ,
কিন্তু ভালোলাগা যে একই,জীবনাদর্শ যে একই!
এরপর হঠাৎ – হঠাৎ একদিন ছিড়লো মায়াজাল।
বাবা সাজলেন তাঁর শেষ সাজ!
মেয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর ফুলশয্যার পাশে –
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, আজ কিছুতেই অশ্রু ঝরতে দেবে না সে!
তার প্রাণ প্রিয় জীবন কারিগর আজ চড়েছে অচিনপুরের রথ!
এবার বুঝি সত্যিই ভিন্ন হলো দুই বন্ধুর পথ!
যে ছোট্টমেয়েটিকে কোলে নিয়ে বাবা করতো প্রশ্ন অনবরত –
“আছছা, তুমি কবে বড় হবে বলোতো?”
সেই মেয়েটি আজ সত্যিই হলো বড় –
শুধু বাবার হলোনা দেখা!!!
0 Comments